শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সত্যকে কখনো মুছে ফেলা যায় না, সেটা আবার প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ উৎসবের তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ইশারার ভাষায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানের থিম ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’। সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছেন। ধারণকৃত ভিডিওতে শুভেচ্ছা বার্তা দেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি লাভরফ।
বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার নানা চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, রেসকোর্সের ঐতিহাসিক বক্তব্য ও ভাষা আন্দোলনে তার নেতৃত্বের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তার ভাষণ প্রচারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, সবার সহযোগিতায় আজকে আমরা সেই সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মার্চ মাস বাঙালি জাতির জন্য এক স্মরণীয় মাস। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি হাজার বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম আবাসভূমি এনে দিয়েছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের বর্ণনা দিয়ে তার কন্যা বলেন, ‘১৯৪৮ সালের এই মার্চ মাসের ১১ তারিখে তিনি মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম কারাগারে অন্তরীণ হন। তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। তিনি মুক্তি পেয়েছেন। আবারও গ্রেপ্তার হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের একমাত্র ভূমিপুত্র। এদেশের সন্তান হিসেবে তিনি সংগ্রাম করেছেন। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’
মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পাকিস্তানি শাসকদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেন— ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ এর সপ্তাহ আড়াই পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধের। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু আজকে এই ভাষণ বিশ্ব ঐহিত্যে স্থান পেয়েছে। একুশটা বছর তারা সব নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল তারই আদর্শ নিয়ে চলেছে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে। সবার সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসে আমরা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি। ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান করতে পারছি।’
জাতির জনকের স্মৃতিচারণ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবদিক দিয়ে মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। তাই আসুন জাতির পিতার ১০১ জন্মদিনে আমরা সেই প্রতিজ্ঞা নিই, যেন জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছেন আমরা সেটা পূরণ করব। বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক চেতানার দেশ।’
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ উন্নয়শীল দেশ হিসেব উন্নীত হতে পেরেছি। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা চাই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত জাতির পিতার সোনার বাংলা হয়ে উঠুক।’
মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেয়ায় শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি লাভরফকেও ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশের উদযাপনে যেসব বিশ্ব নেতা যোগ দিয়েছেন এবং দেবেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সরকারপ্রধান।